রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সন্তানের শিক্ষায় বাবা-মার করণীয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
সন্তান মা-বাবার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। তাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, শরিয়তের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো এবং ইমানদার হিসেবে গড়ে তোলা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। বর্তমানে চাকরি ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলাকেই শুধু দায়িত্ব মনে করা হয়। হ্যাঁ, সন্তানকে হালাল ও বৈধপন্থায় আয়-রোজগার শেখানোও পিতামাতার কর্তব্য। কিন্তু এটাই একমাত্র দায়িত্ব নয়, বরং তাদের দ্বীন ও শরিয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং দ্বীনদার-নামাজি ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৮৯৩

সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া, তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরিয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে যায়- তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গোনাহের ফল ভোগ করতে থাকবে। আখেরাতে এই আদরের সন্তানই আল্লাহর দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে নালিশ করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যতœবান হওয়া।

কোরআন-হাদিসের একটি মৌলিক শিক্ষা হলো, আচার-ব্যবহার, সাজসজ্জা, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা। এসব ক্ষেত্রে বিজাতীয় অনুকরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং শিক্ষা-দীক্ষা, ফ্যাশন ও রীতিনীতিতে বিজাতীয়দের অনুকরণ এবং সে অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে তোলা বড় ধরনের ভুল।

একজন মুসলিম তার সন্তানকে আল্লাহর কালাম শেখাবে না, এটা কল্পনাও করা যায় না। বাস্তবতা হলো, এদেশের অধিকাংশ মুসলমানের অবস্থা এমন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানের বড় বড় ডিগ্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, মা-বাবা থেকে শুরু করে পরিবারের অন্যরা নানাভাবে পেরেশান হচ্ছে- কিন্তু কোরআন মাজিদে শেখানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সন্তানকে কোরআন শেখায় না এমন মা-বাবার হার যদি শতকরা ৭০ হয়ে থাকে, তবে দ্বীন শেখায় না এদের হার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ। নামাজ কীভাবে পড়বে তাও শেখায় না। হালাল-হারাম, পাক-নাপাক, অজু-গোসল তো দূরের কথা। অথচ সন্তানকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো পিতা-মাতার ওপর ফরজ।

শিশুর প্রথম পাঠশালা হচ্ছে- মায়ের কোল। এখানে সে জীবনের অনেক কিছু শেখে। পরবর্তী সময়ে এটাই তার অভ্যাসে পরিণত হয়। শরিয়তে এই পাঠশালার অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, শিশুর এই প্রথম শিক্ষা শুরু হয় স্মার্টফোন বা টেলিভিশন দিয়ে। টেলিভিশনের মন্দ প্রভাব নিয়ে খুব বেশি আলোচনার দরকার নেই, এ বিষয়ে সবাই অবগত।

শরিয়তের আদেশ হলো, ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেবে। যেন তার জীবন শুরু হয় আল্লাহর বড়ত্বের বাণী ‘আল্লাহু আকবার’ দিয়ে। এরপর মা-বাবার দায়িত্ব, সন্তানের ভালো অর্থবোধক নাম রাখা। বাচ্চা কথা বলা শিখলে তাকে সর্বপ্রথম আল্লাহর নাম শেখানোর চেষ্টা করা। যিনি এই সন্তান দান করলেন, এরপর বাকশক্তি দিলেন তার নাম সর্বপ্রথম শেখানোই কৃতজ্ঞ বান্দার পরিচয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সন্তানকে প্রথম কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও এবং মৃত্যুর সময় তাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকিন (মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করানো এবং তাকে কালেমা পাঠ করার দীক্ষাকে তালকিন বলা হয়) করো।’ -শোয়াবুল ইমান : ৬/৩৯৭-৩৯৮

শিশুকে ধীরে ধীরে ছোট ছোট আদব-কায়দা, যেমন ডান হাতে তিন শ্বাসে বসে পানি পান করতে শেখানো। জুতা পরিধান করতে আগে ডান পা এবং খোলার সময় আগে বাম পা খোলা। বাথরুমে ঢোকার সময় আগে বাম পা, বের হওয়ার সময় ডান পা ইত্যাদি শেখার উত্তম সময় এই শৈশবটাই। ঘুমের দোয়া, ঘুম থেকে ওঠার দোয়া, খাওয়ার দোয়া ইত্যাদি সহজ বিষয় এবং ছোট ছোট ব্যবহারিক সুন্নতে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলার সময় এখনই।

শরিয়ত মতে, সন্তানের আখলাক-চরিত্র গড়ার দায়িত্ব মা-বাবার। সময়মতো তাকে শাসন করা, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা, সৎ ও দ্বীনি পরিবেশে রাখা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, … ‘সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাজের জন্য শাসন করো এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪

সন্তানকে একেবারে স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া যাবে না, বরং বুঝের বয়স হওয়া থেকেই তাকে পরিমিত শাসনের মধ্যে রাখার ব্যাপারে এ হাদিস সুস্পষ্ট দলিল। এ ছাড়া আরও বহু বর্ণনায় রয়েছে, মা-বাবার দায়িত্ব হলো, সন্তানকে দ্বীন শেখানো, মন্দ কাজ ও মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখা। শুধু কি তাই? সন্তানের পরিণত বয়সে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করাও তাদের দায়িত্ব। যেন তারা কোনো পাপাচারে লিপ্ত না হয়। এভাবেই সন্তানের শিক্ষায়, জীবন গঠনে বাবা-মাকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দায়িত্ব পালনে ঘাটতি হলেই দেখা দেয় বিপত্তি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

muftianaet@gmail.com

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION